রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ১৫ জুলাই ২০২৪

নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: ইন্টারনেট

দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদেরতুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকারস্লোগান দেওয়াকে অত্যান্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বলেছেন, নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও লাগে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকার বাহিনী কীভাবে দেশে অত্যাচার চালিয়েছে তা তারা জানে না। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাবোধ হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের ২০২৪-২৫ অর্থবছরেরবার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষরএবংবার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিশুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে কথা বলেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা বাসস।

২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে সরকারি কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা, তাদের এই অবদান ভূললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে। পাকিস্তানি হানাদার রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে সেখানে আমার খুব দুঃখ লাগে গতকাল রোববার যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কী জানে৭১ সালের ২৫ মার্চ কি ঘটেছিল সেখানে। সেখানে ৩শমেয়েকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এই দেশীয় দোসররা। ৪০ জন মেয়েকে পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল। তারা সেখানে কী অবস্থায় ছিল? অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল তাদের কাপড় পরতে দেওয়া হতো না। একটা পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো।

সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন তাদেরকে উদ্ধার করা হয় মিত্র শক্তির এক ভারতীয় শিখ সৈন্য নিজের মাথার পাগড়ি খুলে এক মেয়ের গায়ে পরিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এটা কেবল একটা ঘটনা, রকম বহু ঘটনা রয়েছে।

শেখ হাসিনা মুক্তিযদ্ধে নারীদের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বসে থাকতো না। তারাও কিন্তু কাজ করতো। পিরোজপুরে এক মেয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর রান্নার কাজ করতো এবং রাতে নদী সাঁতরে পার হয়ে চিতলমারী গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে হানাদারদের খবর পৌঁছে দিত। ধরা পড়ার পরে দুটো গাড়ির সঙ্গে তাঁর দুই পা বেঁধে টেনে হিঁচড়ে খন্ড বিখন্ড করে ফেলা হয়। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয়না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। এখানে কেউ শান্তি কমিটিতে ছিল কিন্তু মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা (পাকিস্তানী হানাদাররা) তৈরি করেছিল তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল এবং তাদেরকে দিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো অত্যাচার, লুটপাট এবং গণহত্যা চালাতো। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাদের দ্বারা যারা নির্যাতিত তারা ন্যায় বিচার পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। জাতির পিতার একটি ডাকে এই দেশের মানুষ ঘর-বাড়ি পরিবার-পরিজন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রণক্ষেত্রে চলে গেছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। আর যারা বাহিনীতে ছিল (রাজাকার-আলবদর-আলশামস) এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটাতো ভূলে গেলে চলবে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। তাহলেই এদেশ এগিয়ে যাবে এবং সেটা যে বাস্তবতা তার প্রমাণ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর এবং পরে আরো প্রায় বছর তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করি এবং আমরা ভুক্তভোগীরা যখন ক্ষমতায় এসেছি মাত্র ১৫ বছরে আজ বদলে গেছে বাংলাদেশ। বিশে^ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। সেই দরদটুকু থাকতে হবে। যাই হোক এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সরকার প্রধান বলেন, ‘তাঁর প্রথমবার সরকার গঠনের পর থেকেই লক্ষ্য ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশে^ স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল এবং৭৫ এই জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যে মর্যাদা  ভূলুন্ঠিত হয়ে যায় তাকে আবার স্বগৌরবে ফিরিয়ে আনা। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আর দেশকে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানের ২১ এর অনুচ্ছেদের আলোকে আমরা সেবামূখি জনপ্রসাশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকারই গ্রহণ করে। কারণ, প্রশাসনের ওপর থেকে নিন্ম স্তর পর্যন্ত যদি একটা জবাবদিহিতা না থাকে, কীভাবে কার্য সম্পাদন বাস্তবায়ন হবে সে সম্পর্কে যদি ব্যবস্থা না নেই তাহলে সমস্ত কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তাই দ্বিতীয়বার সরকারের আসার পর এই পদ্ধতি নেই এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চালু করি। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজকে ১১তম বারের মত ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আপনারা যারা স্বাক্ষর করলেন সে সকল সচিব আবার নিজের মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ আছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেগুলোর সাথেও আপনাদের এই চুক্তি সম্পাদন করে প্রত্যেকের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি-না নিশ্চই সে ব্যাপারেও আপনাদের নজর রাখতে হবে। আর সেটা আপনারা করবেন বলে আমি আশাকরি। স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে একেবারে নিচের দিক পর্যন্ত আপনাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, আমাদের ওপর দিকটা ভাল আছে কিন্তু নিচের দিকে কিছু কিছু সমস্যা হয়। কাজেই সেগুলো যাতে না হয় সবার মাঝে সেই চেতনা গড়ে তুলতে হবে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারো কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই যেখানেই কোন অনিয়ম দেখা দেবে তার বিরুদ্ধে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধেজিরো টলারেন্সনীতি ঘোষণা করেছি। আর এই দুর্নীতি ধরতে গলে আমাদের সরকারের ওপর দায়টা চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতি খুব কম লোকই করে কিন্তু তার বদনাম হয় খুব বেশি।

সরকার প্রধান বলেন, ‘যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের কী বদনাম হবে না হবে সেটা আমি পাত্তা দিই না। কিন্তু আমি এই সাজাকে আরো শুদ্ধ করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ যাতে সৃষ্টি হয় সেই ব্যবস্থাই নিতে চাই। কোন মতেই আমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।

প্রধানমন্ত্রী এই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সব উদ্যেগ গ্রহণ করলে দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং মানুষের উপকার হবে সে ধরনের প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবায়ন এবং অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহবান জানান। পাশাপাশি অপচয় রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং কৃচ্ছতা সাধনেরও আহবান জানান তিনি।

শেক হাসিনা বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজেদের আত্মবিশ^াস বিবেক, বিবেচনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সকলকে নজরদারি রাখার পাশাপাশি চক্রান্ত করে কেউ যেন খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়