বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

বাংলাদেশের বিজয় উদযাপন

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

আপডেট: ১৩:১০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের বিজয় উদযাপন

আলোআভা প্রতিবেদন: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতূয় প্যারেড অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট, মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনী, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই আকর্ষণীয় প্যারেডে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে সোমবার বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস ব্যাপী মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের বিজয় লাভের ৪৮তম বার্ষিকী উদযাপন করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ম পদাতিক ডিভিশনের তদারকিতে এই প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শনকালে ৯ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আকবর হোসেন তাঁর সঙ্গে ছিলেন।প্যারেড পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অভিবাদন মঞ্চে অবস্থান গ্রহণ করলে তাঁর অনুমতি নিয়ে শুরু হয় মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ। রাষ্ট্রপতি অভিবাদন মঞ্চ থেকে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ, সুসজ্জিত সাঁজোয়া বহর এবং বিমান বাহিনীর মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট ও অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে প্রত্যক্ষ করেন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানের স্থান রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় বাহিনী সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন। আর এরমাধ্যমে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়, বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব মো.আরিফুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ভিভিআইপি গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উচ্চ পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিক ও দেশী বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজারো জনগণ প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। প্যারেডে বিভিন্ন বেসামরিক ও সামরিক সংস্থার অব্যাহত উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের পাশাপাশি প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশ থেকেও রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানানো হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশে আর্মি অ্যাভিয়েশন, নেভাল অ্যাভিয়েশন ও র্যা ব অ্যাভিয়েশন মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট প্রদর্শন করে এবং আকাশ থেকে পতাকা নিয়ে ‘ফ্রিফল জাম্প’ দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন প্যারাট্রুপাররা। কুচকাওয়াজের পর শুরু হয় সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী। এগুলোর মধ্যে ছিল সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিক ও সর্বশেষ মডেলের হার্ডওয়্যার, যেমন সেলফ প্রপেলড গান, স্টেট অব দি আর্ট এমিউনিশন প্লান্ট, চতুর্থ জেনারেশনের ট্যাঙ্ক এমবিটি-২০০০, সশস্ত্র সদস্য বহনকারী যান, সশস্ত্র উদ্ধারকারী যান, মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট সিস্টেম, মিডিয়াম ট্যাঙ্ক টি-৬৯, এ্যামবুুশ প্রটেকশন যান, এন্টি ট্যাঙ্ক যান, সশস্ত্র হালকা যান, নিরস্ত্র আকাশ যান, এয়ার ডিফেন্স গান, এয়ার ডিফেন্স মিশাইল সিস্টেম, অস্ত্র সনাক্তকারী রাডার এসএলসি-২, পেট্রোল ক্রাফট এবং ডিফেন্ডার ক্লাস নৌযান। এছাড়া সম্মিলিত বাদক দল,ওয়ার ডগ ও সম্মিলিত অশ্বারোহী কন্টিনজেন্ট এতে অংশগ্রহণ করেন কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী যান্ত্রিক বহরে সমরাস্ত্রের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। যান্ত্রিক বহরের পরই শুরু হয় বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট এবং অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে। বিমানবাহিনীর কে-৮ ডব্লিইউ, এফ-৭ বিজিওয়ান, ইয়াক ১৩০ ও মিগ-২৯বি যুদ্ধ বিমানের অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে দর্শকদের মুগ্ধ করে। শেষে বর্ণিল ‘ডে ফায়ারওয়ার্কস’ প্রদর্শিত হয়। এদিকে, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ব্যান্ড দলের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যান্ড কন্টিনজেন্ট এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। বিজয় দিবস প্যারেড উপলক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারকে এদিন বর্ণাঢ্য সাজে সুসজ্জিত করা হয়। অভিবাদন মঞ্চের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি রাখা হয়। তার দুই পাশে ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দুই পাশে জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি রাখা হয়। কুচকাওয়াজ শেষে প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ১০টা ২৮ মিনিটে জাতীয় প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তিনবাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব। এর মিনিট তিনেক আগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী, তিনবাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অভ্যর্থনা জানান।  
শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়