বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

সংস্কৃতির মধ্যমণি মুস্তাফা মনোয়ার

প্রকাশিত: ১২:২২, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আপডেট: ০৭:০৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সংস্কৃতির মধ্যমণি মুস্তাফা মনোয়ার

রাজু আনোয়ার:সদা হাস্যোজ্জ্বল, চির তরুণ এক শিল্পী ।  তুলি-ক্যানভাস ও সৃষ্টিশীল ভাবনায় আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির অঙ্গনকে আজীবন ঋদ্ধ করে চলেছেন তিনি। বাংলাদেশে নতুন শিল্প আঙ্গিক পাপেটের বিকাশ, টেলিভিশন নাটকে অতুলনীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন, শিল্পকলার উদার ও মহত্‍ শিক্ষক হিসেবে অগ্রগণ্য দেশের গুণী এই চিত্রশিল্পী । রবীন্দ্রভাবে সিঞ্চিত, শিল্পের সাধনায় আজীবন নিয়োজিত, প্রচারবিমুখ এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব পা রাখছেন ৮৫ বছরে । আজ ১ সেপ্টেম্বর চিত্রশিল্পে স্বতঃস্ফুর্ত পদচারী শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মদিন। এই বরেণ্য শিল্পী ১৯৩৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর যশোর জেলার মাগুরা (বর্তমান জেলা) মহকুমার শ্রীপুর থানার অন্তর্গত নাকোল গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। মুস্তাফা মনোয়ারের পিতা বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ কবি গোলাম মোস্তফা । মাতা জামিলা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। মুস্তফা মনোয়ারের পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার মনোহরপুর গ্রামে।ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মুস্তাফা মনোয়ার সবার ছোট। শৈশব থেকেই গান ও ছবি আঁকার মধ্য দিয়েই তার সহজাত প্রতিভার প্রকাশ ঘটত। তার আরও একটি স্বভাব ছিল তার । তা হলো, অজানাকে জানার। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মুস্তফা মনোয়ারের মাতৃবিয়োগ ঘটে । মা না থাকায় সবাই তাকে চোখে চোখে রাখতে চাইত। ছোট বেলায়  শিশু মুস্তফা মনোয়ার পালিয়ে পালিয়ে গামছা দিয়ে ডোবায়, পুকুরে, বিলে এবং নদীতে মাছ ধরতে যেতেন। সারাক্ষণই তিনি পানিতে থাকতে চাইতেন । রীতিমত মারধর করে তুলতে হতো তাঁকে। সেই সময় থেকেই  বাবা রেকর্ড বাজালেই মনোয়ার রেকর্ডের সামনে গিয়ে বসে থাকতেন এবং তাঁর পছন্দের গানগুলো রেকর্ড থেকে বের করে দিতে পারতেন।  তখন রেকর্ডের গায়ে কিছু লেখা থাকত না এবং রেকর্ডের সবগুলোর চেহারা ছিল একই রকমের। রেকর্ড থেকে পছন্দের গান বের করার এই প্রতিভাটা দেখে তাঁর বাবা বেশ অবাক হতেন এবং বন্ধু-বান্ধবকে ডেকে দেখাতেন। কবি নজরুল ইসলামকেও মুস্তফা মনোয়ারের এই প্রতিভা দেখিয়েছিলেন তাঁর বাবা। মুস্তাফা মনোয়ারের শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়েছিল কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়া করার পর তাঁর বাবা হুগলি থেকে বাকুড়া হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর প্রথমে ফরিদপুর তারপর স্থায়ীভাবে ঢাকার শান্তিনগরে বাড়ি কিনলেন। মুস্তফা মনোয়ার মাতৃহীন ছিলেন বলে নারায়ণঞ্জে মেজ বোনের বাড়িতে আশ্রয় গাড়েন। সেখানে নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারী হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতায় গিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে সায়েন্সে ভর্তি হন। পড়ালেখায় মনোযোগ তাঁর কোনদিনই ছিল না। তাঁর ওপর আবার কলেজে ভর্তি হয়েছেন সায়েন্সে, অথচ অঙ্কে ভিষণ কাঁচা। মুস্তফা মনোয়ারদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন এক গুণী লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি মাঝে মধ্যে মুস্তফা মনোয়ারের আঁকা ছবি দেখতেন এবং খুব প্রশংসা করতেন। তিনি বললেন “ছেলেটার এত ভাল গুণটা সায়েন্স পড়ে নষ্ট হবে!” তিনি একদিন মুস্তফা মনোয়ারের বড় ভাবির সঙ্গে তাঁকে কলকাতায় আর্ট কলেজে নিয়ে গেলেন। শিল্পী রমেন চক্রবর্তী তাঁর আঁকাআঁকি দেখে খুশি হয়ে তাঁকে সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা করলেন । এখানে সমানভাবে চলতে থাকে তাঁর ছবি আঁকা ও গানের চর্চা । আর্ট কলেজে প্রতি বর্ষের পরীক্ষায় তাঁর স্থান ছিল প্রথম । ১৯৫৯ সালে তিনি কোলকাতা সরকারী আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টস বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে চাকরি শুরু করেছিলেন মুস্তফা মনোয়ার । আর্ট কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন তিনি একাডেমী অব ফাইন আর্টস আয়োজিত সর্বভারতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে গ্রাফিক্স আর্টস এ স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় সর্বভারতীয় যুব উৎসবের প্রদর্শনীতেও তাঁর শ্রেষ্ঠ তেল রং এর জন্যে তিনি স্বর্ণপদক পান। এ সময় মুস্তফা মনোয়ারের জল রং এর ছবি ভারতে খুবই সমাদৃত হয়। এই সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে ঢাকা আর্টস কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁকে ঢাকা আর্টস কলেজে শিক্ষকতা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান । ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরুতেই মুস্তফা মনোয়ার সেখানকার স্টেশন প্রডিউসার হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পারফর্মিং আর্টস একাডেমী, জাতীয় সমপ্রচার একাডেমী এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম উন্নয়ন কর্পোরেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে ময়মনসিংহ এর মেয়ে মেরীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মুস্তফা মনোয়ার । স্ত্রী মেরী পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করতেন । তিনি বেশ কিছুদিন ঢাকা মিউজিক কলেজের প্রিন্সীপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান জনক। পুত্র সাহদত মনোয়ার বাংলাদেশ বিমানের পাইলট এবং কন্যা নন্দিনী মনোয়ার একটি এনজিওতে কর্মরত । চিত্রশিল্পে তাঁর স্বতঃস্ফুর্ত পদচারণা, বাংলাদেশে নতুন শিল্প আঙ্গিক পাপেটের বিকাশ, টেলিভিশন নাটকে অতুলনীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন, শিল্পকলার উদার ও মহত্‍শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরা, দ্বিতীয় সাফ গেমসের মিশুক নির্মাণ এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের লালরঙের সূর্যের প্রতিরূপ স্থাপনাসহ শিল্পের নানা পরিকল্পনায় তিনি বরাবর তাঁর সৃজনী ও উদ্ভাবনী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। একসময় বিটিভিতে আজব দেশে অনুষ্ঠানে ‘বাঘা’ ও ‘মেনি’ নামের দুটি চরিত্র তৈরি করে পাপেট শো দেখাতেন মুস্তাফা মনোয়ার । দর্শকদের ভীষণ পছন্দ ছিল সে অনুষ্ঠান। মনোয়ারের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। মনোয়ার তখন তার মেজবুবুর কাছে নারায়ণগঞ্জে থেকে সেখানকার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। নারায়ণগঞ্জের গণআন্দোলনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মনোয়ার তখন দিন-রাত বড় বড় পোস্টার আঁকতে ব্যস্ত থাকত। সেইসব হৃদয়গ্রাহী ও মর্মস্পর্শী পোস্টার নারায়ণগঞ্জের গণআন্দোলনকে জোরদার করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। মনোয়ারের আঁকা পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল চাষাঢ়ার দেয়াল। আর প্রতিটি মিছিলেই থাকত মনোয়ারের আঁকা বিশেষ বিশেষ পোস্টার। আন্দোলনের একপর্যায়ে পোস্টারের বান্ডিল হাতে ধরা পড়লে সেই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাদবাকি পোস্টারসহ মনোয়ার ও ওর দুলাভাই লুৎফর রহমান এবং তার আরেক ভাই মশিউর রহমানকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যায়। অনেক ছোটাছুটি করে বন্ড দিয়ে মনোয়ারকে জেল থেকে বের করেছিলেন তার বাবা । চিত্রশিল্পের পাশাপাশি সঙ্গীতেও তার নাম কলকাতায় খুবই ছড়িয়ে পড়েছিল। বাড়িতে যে ওস্তাদ ফৈয়জ খাঁর শিষ্য শ্রীযুক্ত সন্তোষ কুমার রায়ের কাছে রাগপ্রধান গান শিখত এবং সায়গল, পিএইচ আত্মা, হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়, মুকেশ প্রভৃতি শিল্পীর গাওয়া হিন্দি গান অভ্যাস করত। মনোয়ারের কণ্ঠস্বর অনেকটা সায়গলের মতো। সায়গলের সদ্য প্রয়াতের পরে সায়গলের গানগুলো গাওয়ার জন্য সেই পঞ্চাশের দশকে কলকাতার যারা মনোয়ারের গান শুনেছেন, তারা আজও মনোয়ারকে স্মরণ করে ও মনোয়ার কোনো রেকর্ড করেনি বলে খুবই আফসোস করেন। আর্ট কলেজে পড়ার সময়ই সে নির্মলেন্দু চৌধুরীর গ্রুপে নিয়মিত একক গান গাইত। নির্মলেন্দু ও মনোয়ার ছাড়া অন্য কেউ আর একক সঙ্গীত করত না। বলতে গেলে পুরো পঞ্চাশের দশকটিই ছিল মনোয়ারের গান ও ছবির জগৎ। কলকাতায় তখন ওয়াটার কালার, ওয়েল পেইন্টিং, পোর্ট্রেট পেইন্টিং, ফটোগ্রাফার ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে মনোয়ারের তখন ভীষণ নামডাক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ভারতে অবস্থানকালীন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালনা করেন। পাকিস্তান টেলিভিশনের সেই সূচনালগ্নের নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মনোয়ারের অসাধারণ প্রোডাকশনে শেক্সপিয়ারের Taming of the shrew মুনীর চৌধুরীর করা বাংলা অনুবাদ 'মুখরা রমণী বশীকরণ' ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রক্তকরবী' যুক্তরাজ্যের গ্রানাডা টিভির ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি অব টিভি ড্রামার জন্য মনোনীত হয়েছে। এত ব্যস্ততার মধ্যেও আর্ট কলেজে পড়ার সময় রাজপুতনার পুতুল নাচ যে মনোয়ারকে খুবই আকৃষ্ট করেছিল- ১৯৫৯ সালে আর্ট কলেজের পড়া শেষ করে ঢাকায় এসে সব কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেই পাপেট গড়ার দিকে মন দিয়ে ধীরে ধীরে সে সুন্দর সুন্দর পাপেট তৈরি করে বাংলাদেশের প্রথম পাপেট প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের স্থান তৈরি করে নিল। মনোয়ারের সমগ্র শিল্পকলার বিভাগের অসামান্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা পাপেট নির্মাণের কাজে নিয়োজিত হলো। পাপেট এমনই একটি শিল্প, যেখানে ছবি আঁকা থেকে শুরু করে স্কাল্পচার ও নাটক সব ধরনের অভিজ্ঞতাই একটি পূর্ণাঙ্গ পাপেট শো নির্মাণের সমান উপযোগী ও প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াল। টেলিভিশনে শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’র তিনি ছিলেন মুখ্য পরিকল্পক, সার্কভুক্ত দেশের টেলিভিশনের জন্য নির্মিত শিশুদের শিক্ষামূলক ‘মীনা কার্টুন’ বা অ্যানিমেশন ফিল্মের পরিকল্পকদের মধ্যেও তাঁর অবস্থান বেশ পোক্ত ছিল। টেলিভিশনের ছোট স্টুডিওতে ত্রিমাত্রিকতা রচনা করে তিনি তাঁর উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রকাশ করেন। চিত্রশিল্পে তাঁর স্বত:ফুর্ত পদচারণা, বাংলাদেশে নতুন শিল্প আঙ্গিক পাপেটের বিকাশ, টেলিভিশন নাটক প্রযোজনায় অতুলনীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন, শিল্পকলার উদার ও মহৎ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরা, দ্বিতীয় সাফ গেমসের মিশুক নির্মাণ এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের লাল রঙের সূর্যের প্রতিরূপ স্থাপনাসহ শিল্পের নানা পরিকল্পনায় তিনি বরাবর তাঁর সৃজনী ও উদ্ভাবনী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। মুস্তফা মনোয়ারের উল্লেখযোগ্য শৈল্পিক সৃষ্টি এই ‘পাপেট’। বাংলাদেশ থিয়েটার পাপেট এন্ড এনিমেশনের তিনি পরিকল্পক, গবেষক ও উদ্ভাবক। পাপেট নিয়ে বহুদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। প্রথমবার তিনি তাঁর নিজের পাপেট দলসহ বাংলাদেশের ফোক পাপেট দল ধনমিয়াকে নিয়ে মস্কো ও তাশখন্দ সফর করেন। সেখানে বাংলাদেশের ফোক পাপেট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত তাঁর ‘পাপেট’ এর মাধ্যমে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘ক’ ও ‘খ’ জাপানে ও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের টি. ভি অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করে। ১৯৮২ সালে তিনি কলম্বোয় ‘এনিমেশন এন্ড পাপেট ফর টেলিভিশন’ বিষয়ক আনত্মজার্তিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ঢাকায় জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সাফ - গেমসের জন্যে তাঁর উদ্ভাবিত ‘মিশুক’ যা বৃহৎ আকারের চলমান পাপেটরূপে সকলের নিকট জনপ্রিয় ও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাঁর উদ্ভাবিত পাপেট আন্তজার্তিক মানের। যার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যাকে ইউ. এন. আই. এম. এর সদস্যপদ প্রদান করা হয়। একটা দেশের জন্য একজন মুস্তফা মনোয়ারই যথেষ্ট। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে একটা এনিমেশন কোর্সে বক্তৃতা দেয়ার সময় কথাটা বলেছিলেন প্রখ্যাত কবি পূর্ণেন্দু পাত্রী। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক উজ্জ্বল মধ্যমণি মুস্তফা মনোয়ার তাঁর বিভিন্নমুখী শিল্পকর্ম তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশের চিত্রশিল্পে জলরঙের চর্চায় তাঁর অবদান অবশ্য স্বীকার্য তিনি জলরঙের স্বচ্ছতা রক্ষায় সিদ্ধহস্ত এবং মৌলিক নৈপুণ্যের অধিকারী। জলরঙ ছাড়াও তেলরঙ ও গ্রাফিক্সে শিল্পী মুস্তফা মনোয়ারের দক্ষতায় স্বীকৃতি মিলেছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে। প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে বড় পুকুরে, বটগাছে আর নদীতে, বিলে বিস্তর হরিয়াল, শামুকভাঙা, চেগাপাখি, পানকৌড়ি, হাঁস আর লম্বা গলার বক দেখার স্মৃতি তাঁর আজও চোখে ভাসে । যে দেখার অভিজ্ঞতাকে তিনি তাঁর পাপেটে খুব বিস্তারে এবং বিশ্বাসে প্রয়োগ করে 'ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে' গানটির কাহিনীরূপ উপস্থাপন করেছেন। ওয়ার্ল্ড ভিউ ফাউন্ডেশন আয়োজিত শ্রীলঙ্কা, কলম্বোতে এ্যানিমেশন এ্যান্ড পাপেট ফর টিভি শীর্ষক সম্মেলনে রিসোর্স পারসন হিসেবে, ১৯৯১ সালে সিঙ্গাপুরস্থ এশিয়ান ম্যাস কমিউনিকেশন রিসার্চ ইনফরমেশন সেন্টার আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে এবং ১৯৯২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফ আঞ্চলিক দফতর নেপালে অনুষ্ঠিত মা ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন মুস্তাফা মনোয়ার। আজ  রবিবার দুপুরে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় দেখানো হয়েছে ওয়ালটন ‘তারকা কথন’-এর বিশেষ পর্ব। ‘তারকা কথন’-এ জন্মদিন প্রসঙ্গে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘জন্মদিন মানেই একটা বছর বেড়ে যাওয়া। ছোটবেলায় খুব ভালো লাগতো। একসময়ে দেখলাম বড় হওয়া তো ভালো না, ছোট থাকাই ভালো’ । তিনি বলেন, ‘বয়সটা দুই রকম, একটা অঙ্কের ব্যাপার, আরেকটা মনের তৃপ্তির ব্যাপার। পৃথিবীকে দেখার ব্যাপার, পৃথিবীকে ভালোবাসার ব্যাপার। সেইখানে বয়স বাড়ে না।’ বিশেষ ‘তারকা কথন’-এর লাইভ অনুষ্ঠানে তাঁর অভিজ্ঞ জীবনের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সবার সাথে জন্মদিনের মুহূর্তটুকু উদযাপন করেছেন। এঁকেছেন কাশ ফুলের ছবি। টেলিফোনে কথা বলেছেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ এবং হায়দার রিজভির সঙ্গে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন দিলরুবা সাথী। পল্লীগীতি ছাড়াও মুস্তফা মনোয়ারের কণ্ঠে গজলের অপূর্ব মাধুর্য ছিল। আর্ট কলেজে দ্বিতীয়বর্ষে পড়ার সময়ে তিনি ‘হিজ মাস্টার কম্পিটিশনে’ অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে একক সঙ্গীত পরিবেশনার জন্য বশীর আহমেদ এবং সুবীর সেনের সঙ্গে যুগ্মভাবে সেরা গায়ক নির্বাচিত হন। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর দলে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত থেকেছেন। পরে ছবি আঁকার ব্যস্ততার জন্য মুস্তফা মনোয়ারের আর গান গাওয়া হয়নি। কিন্তু সুর থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন নন কোনোদিনই। তাঁর পাপেট শিল্প সুর, কথা, গান, অভিনয়, চিত্রকলা, কবিতা সব শিল্পকেই ধরে আছে। ৮৫তম জন্মদিনে দেশ বরেণ্য  শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের  দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/                        
শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়