আবদুল্লাহ আল ফাহিম (ছবি সংগ্রহীত)
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মেধাবী নির্মাতাদের পুরস্কার প্রাপ্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের মেধা জয় করে ছিনিয়ে আনে সম্মান ও মর্যাদা।
এমনই এক নতুন দিগন্তের আশার বাণী শুনিয়েছিলেন তরুণ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা আবদুল্লাহ আল ফাহিম। তিনি জানান, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করার পরে নানাভাবে উপেক্ষিত হয়ে দেড় বছর আগে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে পড়াশোনা করতে ইতালিতে চলে যান, আর সেখানেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে।
ফাহিম দাবি করেন, এখন তার জার্মান ভাষার চলচ্চিত্র "কিলার" দিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এই চলচ্চিত্রটি ইংরেজি ভাষায়ও পাওয়া যাবে এবং এতে ২৯টি দেশের বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জার্মান অভিনেতা ড্যানিয়েল মুলার, ডেভিড নোয়েমান এবং ইতালিয়ান অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা লুইস।
ফাহিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন তিনি জার্মান চলচ্চিত্র নির্মানে অবদান স্বরূপ জার্মান মিনিস্ট্রি থেকে সেরা পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। এতে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের একাধিক তারকা শিল্পীরাও অভিনন্দন জানায়।
জার্মান মিনিস্ট্রি থেকে প্রাপ্ত পুরস্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্মাতা ফাহিম আলোআভা নিউজ২৪’কে আনন্দের সাথে জানান, জার্মানে এই কিলার চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করায় জার্মান মিনিস্ট্রি থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয় পাশাপাশি ভূয়সী প্রশংসা করে জার্মান কালচারাল মিনিস্ট্রি। এবং তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ক্রিনশট সংযুক্ত করেছে লিখেছেন, ‘জনাব হ্যারিসন জার্মানির মিডিয়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে। তারা আমার সিনেমার প্রযোজকের সাথে ২৩ জন সদস্যের মিলে "কিলার" সিনেমাটি দেখেছে এবং আমাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছে’।
আলোআভা নিউজ২৪ থেকে পুরস্কারের সত্যতা যাচাই করতে গেলে প্রথমে ‘জার্মান মিনিস্ট্রি অব কালচার’ এমন কোন পুরস্কার দেয়না বলে খোঁজ পায়। এছাড়া আরও জানা যায়, বর্তমানে দায়িত্বশীল চ্যান্সেলারি ফেডারেল কমিশনার ফর কালচার অ্যান্ড দ্য মিডিয়ার প্রতিমন্ত্রী হলেন ক্লডিয়া রথ।
ফাহিমের ফেসবুকে শেয়ারকৃত পোষ্ট যাচাই-বাছাইয়ে তার জার্মান পুরষ্কারের পোষ্টটির ছবি জুম করলে দেখা যায় সেটিতে লেখা আছে ‘ব্রিটিশ শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ২০২২’।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ আই ইন্টেলিজেন্স পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে এ ছবিটি দুইবছর আগে এক ব্রিটিশ নারী জিতেছিলেন। এই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত করে পুনরায় আপলোড করা হয়েছে।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা দাবি করা এই তথাকথিত জার্মান ফিল্ম নির্মাতা ফেসবুকের পোষ্টের মাধ্যমে আরও দাবি করেছিলেন, তিনি ‘রোম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরষ্কার ২০২৪’ পুরষ্কার জিতেছেন।
এখানেও বরাবরের মত শোবিজ অঙ্গনের তারকারা অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানিয়েছেন।
এই পুরষ্কার সম্পর্কে সত্যতা যাচাইয়ে রোম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরষ্কারের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ‘সার্টিফিকেটটির ডিজাইন আমাদের, তবে আমরা বিজয়ীদের তালিকায় এই নামটি দেখতে পাচ্ছি না। সাথে অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ২০২৪ এর বিজয়ীদের সম্পূর্ন তালিকা সংযুক্ত করে প্রেরণ করে রোম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরষ্কার কর্তৃপক্ষ।
সেখানেও বিজয়ী তালিকায় তথাকথিত জার্মান সিনেমা ‘কিলার’ ও পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফাহিমের নাম দেখতে পাওয়া যায়নি।
সত্যতা যাচাইয়ে আরও নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় নির্মাতা ফাহিমের সাথে। তিনি টানা ১৮ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের কথোপকথনে বাংলাদেশের উপক্ষিত হওয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ ঝাড়েন। এমনকি ক্যারিয়ারের শুরুতে গণমাধ্যম কর্মীদেরও সহযোগীতা পাননি বলেও অভিযোগ যুক্ত করেন।
তার উত্থান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পুরস্কার প্রাপ্তির সকল তথ্য বলতে থাকেন। একপর্যায়ে জানতে চাওয়া হয় এই পুরষ্কার প্রাপ্তির সত্যতা সম্পর্কে। তখন তার জার্মান প্রযোজক মি. বেলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পুরষ্কারের প্রাপ্তি সম্পর্কে প্রযোজক বেল জানেন। তিনি কিছুই জানেন না।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়-আপনি একটি পুরস্কারও রিসিভ করেন নি? কেন করেন নি? নির্মাতা ফাহিম বলেন, এগুলো মিস্টার বেল জানেন।
তাকে বলা হয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এই পুরষ্কার দুইটির একটিও আপনি কিলার সিনেমা নির্মাণের ফলে জিতেছেন বলে সত্যতা পাওয়া যায়নি। তখন ফাহিম মিস্টার বেলের সাথে আলাপ করে জানাবেন বলে কয়েকঘন্টা সময় চান।
এরপর প্রায় ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তথাকথিত জার্মান সিনেমা নির্মাতা জন আবদুল্লাহ আল ফাহিম সাড়া দেননি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক যাচাই করে দেখা যায় তিনি সকল পোষ্ট হাইড করে দিয়েছেন। পাশাপাশি তথাকথিত ‘কিলার’ সিনেমার টিজারটিও রিমুভ করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল ফাহিম ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে এসে তার নতুন সিনেমা ‘ঢাকা সাগা’ নির্মাণ করবেন। শোনা গেছে চলচ্চিত্র অভিনেতা বাপ্পী চৌধুরীও সে সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। এছাড়াও একাধিক তারকাদের নাম শোনা গেছে। তবে তা নিশ্চিত করেননি এই নির্মাতা ফাহিম।