রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৮ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

অভ্যুত্থানের প্রতিধ্বনিময় কনসার্ট

মুগ্ধতা ছড়ালেন রাহাত ফতেহ আলী খান

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

মুগ্ধতা ছড়ালেন রাহাত ফতেহ আলী খান

ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর গানপ্রেমীদের জন্য দিনটি ছিল দারুণ আনন্দের। বিচিত্রি সুরের অবগাহনে কেটে গেছে তাদের দুরন্ত সময়। সুরেলা সেই সফরের শুরুটা হয় বিকেলে। শ্রোতাদের মুগ্ধতার আবেশে ভাসানো সংগীতাসরটির সমাপ্তি হয় রাত এগারোটার পর। মাঝে কয়েক ঘন্টার সুরের  শ্রোতধারায় আবিষ্ট হলো মন-প্রাণ।

সেই মুগ্ধতার অনুভবে কখনো বা শিল্পীর কণ্ঠের সমান্তরালে সুর মিলিয়েছেন। আবার কখনো উচ্ছ্বাসে জমিন থেকে শরীরকে শূন্যে ভাসিয়ে নেচেছেন গানের তালে। এই গানের আসরে পরিবেশিত হয়েছে নানা ধারার গান। সেই সুবাদে বৈচিত্র্যের অনুসন্ধানী কনসার্টটিতে শ্রোতারা শুনতে পেয়েছেন দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের সঙ্গে ্যাপ গায়কদের মনমাতানো গান। সেই সঙ্গে  শোনা হয়েছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীতধারা কাওয়ালি থেকে বলিউডের সিনেমার গান।

শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই কনসার্টের শিরোনাম ছিলইকোস অব   রেভল্যুশন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তার জন্য এই চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করেস্পিরিটস অব জুলাইনামের প্লাটফর্ম। অভ্যুত্থানের প্রতিধ্বনিময় কনসার্ট থেকে আয়কৃত অর্থ শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে অনুদান  দেওয়া হবে।

মানবতার সেবায় নিবেদিত কনসাটের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন সুফিগানের কিংবদন্তি পাকিস্তানি কণ্ঠশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। বিনা পারিশ্রমিকে তিনি অংশ নিয়েছেন এই সংগীতায়োজনে।  এই শিল্পী যতক্ষণ গান গেয়েছেন  তন্ময় হয়েছে শুনেছেন গানপ্রেমীরা। রাহাতের কণ্ঠের খেলায় কখনো বা উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে শূন্যে ভাসিয়ে দিয়েছেন শরীর। রাত নয়টা ৫০ মিনিটে মঞ্চে আসেন এই শিল্পী। মঞ্চে উঠেই  সবাইকে সালাম দিয়ে  নিজের পরিচয় দিলেন ছোট করে। জানালেন সঙ্গে তার ছেলেও প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছে।

পরিবারের ৫০০ বছরের সঙ্গীত পরম্পরার ঐতিহ্য ধারণকারী শিল্পী গাইলেন গলা ছেড়ে। শুরুতেই কণ্ঠে তুলে নেন বলিউড মুভির গানতুনা জানে আসপাস হ্যায় খুদা  এরপর পরিবেশন করেন চাচা নুসরাত ফতেহ আলীর গানসাজনা তেরে বিনা  পাঞ্জাবি ভাষার এই গানেই মজালেন সুররসিকদের। বৈঠকী ঢংয়ে যখন তিনি রে পিয়াগেয়েছেন তখন  শ্রোতারাও কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন সেই সুর। সম্মিলিত সেই সুরধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়েছে  আর্মি স্টেডিয়ামের বিশাল প্রান্তরজুড়ে। ভালোলাগার অনুভবে ঝরেছে মুর্হুমুর্হু করতালি।

ছড়িয়েছে কলরব। পঞ্চম পরিবেশনায় তিনি গেয়েছেন প্রেম ভক্তিমূলক কাওয়ালি গানজরুরি থা এরপর শুনিয়েছেন  মেরে রসকে কামার তুনে পেহেলি নজর/জব নজর ছে মিলায়ি মাজা আগায়া/জোস হি  জোস  মে মেরী আগোশ  মে/আকে তু জো ছামায়ী মাজা আগায়া ...  এরপরআফরিন আফরিনসহ  নানা আঙ্গিকের গানে গানে ঘণ্টারও বেশি পরিবেশনা পর্বে মাতিয়ে রেখেছেন শ্রোতাদের। 

এর আগে রাত  সাড়ে  নয়টায় মঞ্চ থেকে ঘোষণা এলো এবার আসছেন ওস্তাদ রাহাত ফতেহ আলী খান।  ঘোষণাটি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এসময় মঞ্চে উপস্থিত আরেক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ফরিদা আখতার বলেন, এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি। খুনী হাসিনার বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে। তরুণরা  স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।  আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০২১ সালে টিএসসিতে  আমরা বন্ধুরা মিলে কাওয়ালি গানের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সেটা ছাত্রলীগের বাধায় - হয়ে  যায়। এবার কাওয়ালির কিংবদন্তি বাংলাদেশে গাইছেন। বাংলাদেশের মানুষ যে স্বপ্নের দেশ চায় সেই বাংলাদেশ গড়বো আমরা।

রাহাত ফতেহ আলীকে অনুসরণ করে দেশের শিল্পীরাও স্বল্প পারিশ্রমিকে অংশ নিয়েছেন এই কনসার্টে। শ্রোতাদের মনমাতানো এই আয়োজনে অংশ নেয় দেশীয় ব্যান্ডদল আর্টসেল, চিরকুট, অ্যাশেজ আফটারম্যাথ। এছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন ্যাপ গায়ক সেজান হান্নান। গান ছাড়াও জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত গ্রাফিতি প্রদর্শনী, মঞ্চনাটক মুগ্ধ ওয়াটার জোন কনসার্টে যুক্ত করে ভিন্ন মাত্রা।

দুপুর ২টায় দর্শকদের জন্য কনসার্টের ফটক খুলে  দেওয়া হয়। এসময়  জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ঘোষণা দেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহত ১০০ জন কনসার্টের ভিআইপি আসনে সামনের সারিতে থাকবেন। রাত আটটার আগে ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ জুলাই আন্দোলনে আহতদের নিয়ে আবারো মঞ্চে আসেন সারজিস আলম। এসময় স্নিগ্ধ সবাইকে নিয়েআবু সাঈদ-মুগ্ধ/শেষ হয়নি যুদ্ধবলে  স্লোাগান দেন। এসময় জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনাকে খুনি আখ্যা দিয়ে তার বিচার দাবি করেন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবিও জানানো হয়।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়