শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৭ ১৪৩১

Aloava News24 | আলোআভা নিউজ ২৪

লাকি ভাস্কর: সততা বনাম লোভের এক জমজমাট গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

লাকি ভাস্কর: সততা বনাম লোভের এক জমজমাট গল্প

ছবি সংগৃহীত

জীবনমুখী গল্পের আবেগঘন নাটকীয়তা দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বিরাট এক জনরা দখল করে আছে। এমন ঘরানার চলচ্চিত্রের প্রাণপুরুষদের অন্যতম হচ্ছেন দুলকার সালমান। তার উপস্থিতি অনায়াসে ঘুচিয়ে দেয় ছবির বাণিজ্যিক আবেদন শৈল্পিক গভীরতার মধ্যকার ব্যবধান। এই ধারাবাহিকতার উন্মুক্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক মুভি লাকি ভাস্করে।

চরিত্র গল্পের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা নিয়ে সমালোচক দর্শকদের মধ্যে সিনেমাটি ইতোমধ্যে বেশ আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। কারা ছিলেন সিনেমাটির নেপথ্যের কলাকুশলী, পর্দায় তাদের পরিবেশনাই বা কেমন ছিল, চলুন, তা পর্যালোচনা করা যাক।

লাকি ভাস্কর বৃত্তান্ত

তেলেগু ভাষার অপরাধ ঘরানার চলচ্চিত্রটির রচনা পরিচালনায় ছিলেন ভেঙ্কি আটলুরি। সিথারা এন্টারটেইনমেন্ট্স, ফরচুন ফোর সিনেমা শ্রীকারা স্টুডিওর অধীনে ছবির প্রযোজনা করেছেন এস নাগা ভামসি সাই সৌজন্যা।

শ্রেষ্ঠাংশে সিনেমার নাম ভূমিকায় থাকা দুলকার সালমানের বিপরীতে ছিলেন মীনাক্ষী চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন তিনু আনান্দ, পি সাই কুমার, রামকি, রঘু বাবু, সর্বদামান ডি ব্যানার্জি, শচীন খেড়েকার, প্রভাস শ্রীনু, হাইপার আদি, শিবনারায়ণ নারিপেদি সূর্য শ্রীনিবাস।

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র ভাস্কর কুমার একজন নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ যিনি পেশায় ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। টানাপোড়েনের জীবন থেকে বাঁচতে এক ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার পর তিনি জড়িয়ে পড়েন ভয়াবহ এক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে।

সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায় চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর।

লাকি ভাস্কর মুভি রিভিউ

ছবিটিতে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার বিষয়টি হচ্ছে একই চরিত্রের মধ্যে বিচিত্রতা। ভিন্ন অংশগুলোর প্রতিটি প্রেক্ষাপটের সঙ্গে পার্শ্বচরিত্রগুলোকে পরিমিত অনুষঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন নির্দেশক আটলুরি। ফলে উপজীব্য কাহিনীর আবহে উঠে এসেছে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত গুটি কয়েক বিষয়। চলুন, গভীরভাবে তা বিশ্লেষণ করা যাক।

গল্পের আবেদন পরিণতি

সিনেমার প্রধান চরিত্র ভাস্কর ব্যাংকের একজন ক্যাশিয়ার, যিনি নিজের সংসার চালাতে রীতিমত যুদ্ধ করে চলেছেন। তার পরিবারে রয়েছে তার স্ত্রী সুমতি অসুস্থ বাবা।

ভাস্করের দিন বদলের জন্য আলোকবর্তিকা নিয়ে হাজির হন অ্যান্টনি। জীবনের যাবতীয় সমস্যা থেকে বাঁচার চাবিকাঠি থাকলেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে অ্যান্টনির প্রস্তাবে।

এই সুযোগ আপাতদৃষ্টিতে আশীর্বাদ মনে হলেও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভাস্কর নিমেষেই এগিয়ে যেতে থাকে অন্ধকার জগতের দিকে। আর এভাবেই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের নিকট আবেদন রেখে যায় গল্পে প্রবেশের।

এক দিকে ভাস্কারের অবৈধ পদক্ষেপগুলো সাময়িক স্বস্তির উদ্রেক করে, অন্যদিকে লোভের কারণে তার জীবন জড়িয়ে পড়তে থাকে নানাবিধ জটিলতায়। সফলতা পাওয়ার শর্টকাট রাস্তাগুলো খুব আকর্ষণীয় হলেও দিন শেষে যে এর চরম মূল্য দিতে হয়তা ফুটে ওঠে গল্পের পরিণতিতে।

কাহিনী বিন্যাসের জড়তার রোমাঞ্চকর রূপান্তর

মুভির প্রথমার্ধের ধীরগতিটা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল তা খুব সহজেই বোঝা যায়। যথেষ্ট সাবধানতার সঙ্গে প্রতিটি চরিত্র কাহিনীর স্তম্ভগুলোর গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ভনিতা দর্শকদের কিছুটা খেই হারানোর দিকে ধাবিত করলেও আবেগের উপকরণগুলো চিত্রনাট্যকে একদম গতিহীন হতে দেয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় নাটকীয়তার অভিকর্ষ প্রভাব, যেখানে পরতে পরতে থাকে অপ্রত্যাশিত টুইস্ট।

নেপথ্যে আবেগঘন পটভূমি থাকলেও ব্যাংক রসিদ কেলেঙ্কারির ক্লাইমেক্সটি উত্তেজনাকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয়। অংশে মুভির সামগ্রিক সম্পাদনা আটলুরির চিত্রনাট্যে মেধার বিশদ পরিচয় মেলে।

বৈচিত্র্যপূর্ণ স্তরে চরিত্রের বিকাশ

একজন ভাস্করকে লাখ লাখ মধ্যবিত্ত চাকরীজীবীদের অন্তরে পৌঁছে দিয়েছেন দুলকার। আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে অপমান, হতাশা এবং সেই সঙ্গে ধনদৌলতের নেশা ছিল তার চরিত্রের প্রধান দিক। বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রত্যেকটির স্বাধীন পরিস্ফূটন ঘটেছে তার অভিব্যক্তিতে, যা কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্পর্শ করেছে দর্শকদের অনুভূতি।

সুমতির চরিত্রে মীনাক্ষী চৌধুরীর অবস্থান সংলাপ আবহতে যোগ করেছে উষ্ণতা। চলচ্চিত্রের কাহিনীকে পূর্ণতা দিয়েছেন ব্যাংকের জিএমের ভূমিকায় শচীন খেড়েকার অ্যান্টনির চরিত্রের রামকি।

শৈল্পিকতা চিত্তবিনোদনের যুগপৎ বিচরণ

মুভির পরিবেশ, আবহ, দৃশ্যধারণের নৈপুণ্য বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত দিকগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। জি ভি প্রকাশ কুমারের সঙ্গীত পরিচালনা উদ্দীপনা অপ্রতুলতার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিকতা বজায়ে পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে।

সঙ্গীতায়োজনে দারুণ সংযোজন ছিল ভিশা মিশ্র শ্বেতা মোহানের ডুয়েট এবং উশা উথুপের প্লেব্যাকগুলো। গল্পের মূল আবেদন থেকে রোমাঞ্চকর দৃশ্যের রূপায়নকে চমকপ্রদ করে তুলেছে নিমিশ রাভির সিনেমাটোগ্রাফি। ভাস্করের সংকট নিরসণের কায়দা এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্লাইম্যাক্স সিনেমার পরিণত সম্পাদনার দৃষ্টান্ত।

কিছু অপূর্ণতা

মূলত প্রথমার্ধের ধীরগতিটাই এই ছবির সবচেয়ে বড় অপূর্ণতা। বিশেষত সংকটের সুবিধাজনক সমাধান দৃশ্যায়নে পরিমিতিবোধের কিঞ্চিত ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। উপরন্তু, মাঝেমধ্যেই দুলকারের চতুর্থ দেওয়াল ভাঙ্গার ব্যাপারটিটুয়েল্ফথ ফেইলেররিস্টার্টের মতো স্লোগান বা পাঞ্চ লাইন হয়ে উঠতে পারেনি।

পরিশেষ

লাকি ভাস্কর মুভিটি ৮০এর দশকের শেষের দিকে মধ্যবিত্তের সহজাত প্রবৃত্তি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা জীবন সংগ্রামের নিরঙ্কুশ পরিস্ফূটন। প্রধান ভূমিকায় দুলকার সালমানের সপ্রতিভ অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেদের চরিত্রগুলোর সুবিচারে সচেষ্ট ছিলেন সহঅভিনয়শিল্পীরা।

এখানে গল্পের মূল নির্যাস তুলে এনে কাঙ্ক্ষিত বার্তাটি প্রকাশে ভেঙ্কি আটলুরির অবদান অনস্বীকার্য। সিনেমার প্রথমার্ধে কাহিনী গঠনের জড়তা গতি পেয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে, যেখানে বায়োপিকের রূপান্তর ঘটেছে রুদ্ধঃশ্বাস থ্রিলারে।

সর্বোপরি, সম্পাদনা, সঙ্গীত সিনেমাটোগ্রাফির দুর্দান্ত সমন্বয়ে চলচ্চিত্রের শেষ পর্যন্ত দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়