ছবি সংগৃহীত
আজ ১০ আগস্ট, বুধবার; বরেণ্য চিত্রশিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতানের জন্মদিন। ১৯২৪ সালের এই দিনে তৎকালীন মহকুমা শহর নড়াইলের চিত্রা নদীর পাশে মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মোহাম্মদ সুলতান। অবশ্য মহান এই শিল্পী এস এম সুলতান নামেই বেশি পরিচিত। তার বাবা মো. মেছের আলী ও মা মোছা. মাজু বিবির দেওয়া এস এম সুলতানের আদুরে নাম ছিল লাল মিয়া।
এস এম সুলতান তার জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তার ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তার ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সুলতানের ৭০ বছরের বোহেমিয়ান জীবনে তিনি তুলির আঁচড়ে দেশ, মাটি, মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতী মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাকার করে সৃষ্টি করেছেন ‘পাট কাটা’, ‘ধানকাটা’, ‘ধান ঝাড়া’, ‘জলকে চলা’, ‘চর দখল’, ‘গ্রামের খাল’, ‘মৎস্য শিকার’, ‘গ্রামের দুপুর’, ‘নদী পারাপার’, ‘ধান মাড়াই’, ‘জমি কর্ষণে যাত্রা’, ‘মাছ ধরা’, ‘নদীর ঘাটে’, ‘ধান ভানা’, ‘গুন টানা’, ‘ফসল কাটার ক্ষণে’, ‘শরতের গ্রামীণ জীবন’, ‘শাপলা তোলা’র মতো বিখ্যাত সব ছবির মাধ্যমে।
১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।
মহান এই শিল্পী ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রাবাসে অবস্থান করে ফিরে যান মাতৃভূমি নড়াইলে। ১৯৫৫ সালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি পুরুলিয়ায় নন্দন কানন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পী ১৯৫৬ সালে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কয়েকদিন আবস্থান করেন। ১৯৬৮ সালে যশোর-খুলনা ক্লাবে তার একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই সুলতানের মাছিমদিয়ার বাড়িতে দি ইনস্টিটিউট অফ ফাইন আটর্স উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শিল্পী জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে-ঘুরে যুদ্ধের ছবি আঁকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিল্পী নিজ শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মুলত এই প্রদশর্নীর মাধ্যমে এ দেশের সুশীল সমাজের তার নতুন ভাবে পরিচয় ঘটে।
কালোর্ত্তীণ এই চিত্রশিল্পী ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি একুশে পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্স্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান এস এম সুলতান।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিল্পী সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।