কাজী নজরুল ইসলাম - ছবি : সংগৃহীত
বাঙালির সব আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চিরবিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১২৩তম জন্মজয়ন্তী। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে তাকে জাতীয় কবির সম্মান দেন।
১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ডাকনাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে দুদিনব্যাপী উৎসব আয়োজন করেছে ছায়ানট। বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় এ অনুষ্ঠান হবে। উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবে। এই উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত।
জাতীয় পর্যায়ে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারের বিভিন্ন দফতর-সংস্থাসমূহ। এ বছর জাতীয় পর্যায়ে মূল অনুষ্ঠান হবে নজরুল স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায়। প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিদ্রোহীর শতবর্ষ’। বেলা ১১টায় কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম. বাহাউদ্দিন বাহার ও কবিপৌত্রী খিলখিল কাজী। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্মারক বক্তা থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে।
এছাড়া ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন নজরুল মেলা, নজরুলবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। সমাপনী দিনে হীরক মুশফিকের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হবে যাত্রাপালা ‘মধুমালা’। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে। তাছাড়া ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমণ্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন ও বাকশক্তি হারান। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয় এবং ‘একুশে পদক’ দেয়া হয়। সে বছরের ২৯ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।