শেষ সময়ে জমে উঠছে গরুর বাজার

বছর ঘুরে আবার এসেছে ত্যাগের উৎসব ।আর মাত্র ১দিন পরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা।ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে ঈদুল আজহা । ঈদের নামাজের পর সারা দেশে শুরু হবে পশু কোরবানি।মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানরা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহার নামাজের পর রাজধানীসহ সারাদেশে পশু কোরবানি শুরু করবেন।
এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর পশুর হাটে গরু আসছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে । বেচাবিক্রি ও জমে ওঠেছে । এতদিন যারা হাঁটে এসে গরু দেখতেন দর করতেন তারা এখন গরু নিয়েই বাড়ি ফিরছেন। বেশি ভাগ ক্রেতাই দেখছেন মাঝারি সাইজের গরু ।তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় গরুর চাহিদা কিছুটা কম। দেশে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং বন্যার কারনে ঈদের আনন্দ আমেজ অনেকটাই ম্লান।
এসব ব্যাপারে করোনা এবং বন্যার দুর্যোগকে দায়ী করছেন গরু ব্যবসায়ীরা। তবে এরই মধ্যে অনলাইনে পশু কেনাবেচাও বেশ জমে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পিছিয়ে নেই। করোনা সংক্রমণ রোধে ই-কমার্স অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহায়তায় অনলাইনে কোরবানির পশু কিনে অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানি, মাংস প্রক্রিয়াকরণ এবং বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন। সেখান থেকেই যাচাই-বাছাই করে গরু কিনছেন ক্রেতারা।
তাই অনলাইনে পশুর হাট জমজমাট। তবে এতদিন অনলাইনে বেচা-বিক্রি ভালো হলেও বর্তমানে হাঁটের বিক্রিও জমে উঠেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৭টি হাটে সারা দেশ থেকে পশু আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু কেনাবেচার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই চলছে বেচা-বিক্রি। রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা আসছেন। পশু দেখছেন। ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকাচ্ছেন। ক্রেতার চাহিদার আলোকে ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন এবং বাড়াচ্ছেন। ৫০-৭০ হাজার টাকা দামের গরু বিক্রি বেশি।
পুরান ঢাকার ঐহিত্যবাহী রহমতগঞ্জ ফুটবল ক্লাব মাঠে কোরবানির পশুর হাটে আনুমানিক ২০ মণ ওজনের বিশাল আকারের গরু ‘শান্ত’র পাশে দাঁড়িয়ে হতাশার সুরে এ কথা বলছিলেন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা গরু ব্যাপারী আবদুল মান্নান।অনেক আশা নিয়ে এই একটি মাত্র গরুই হাটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন তিনি। সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা দামে গরুটি বিক্রি করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু গত চার দিনে কোনো ক্রেতা কেনার মতো দাম বলেনি। তাই ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আবদুল মান্নানের চেহারায় ততই দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ছে।
মান্নান বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ক্রেতারা গরুর উল্টাপাল্টা দাম বলছেন। ছয় লাখ টাকার গরুর দাম দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকায় দরকষাকষি করছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, লাভতো অনেক দূরের কথা, এখন পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব কি-না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
বাজারের বড় গরু নিয়ে শুধু আবদুল মান্নান একা নন, তার মতো আরও বেশ কয়েকজন ব্যাপারী দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বুধবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন ও ব্যাপারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এ হাটে দুই থেকে পাঁচ ছয় লাখ টাকা দামের বড় গরুগুলোর ক্রেতার দেখা মিলছে না। স্বল্পসংখ্যক ক্রেতা যারা দরদাম করছেন তারাও সঠিক দামের কাছাকাছিও দাম বলছেন না। বাজারে ৬০-৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরুর ক্রেতাই বেশি।
হারিছ মিয়া নামের একজন ব্যাপারী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুযোর্গ করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ক্রেতারা গরুর প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দাম বলছেন। গরু কিনে লাভ করার মানসিকতা নিয়ে কোরবানি দেয়া কতটুকু ইসলাম ও বিধিসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই ব্যাপারী।
সরেজমিন হাট পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, বাজারে টুকটাক গরু বিক্রি হলেও বড় বড় গরুর ব্যাপারী ও তাদের সহযোগীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। তবে তারা আশা করছেন, আজ ও আগামীকালের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি হবে। ক্রেতা পেলে কমবেশি লাভ কিংবা লাভ ছাড়া কেনা দামে বিক্রি করে দেবেন।
গরুর হাটের পাশাপাশি জমে উঠেছে ছাগলের বাজারও। কয়েকদিন আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা ছাগল বাজারে উঠেছে । বাজারের রাজধানীর পাড়া-মহল্লায়ও বিক্রি হচ্ছে ছাগল।ক্রেতারা জানান, দাম নাগালের মধ্যে থাকায় কুরবানির পশু হিসেবে ছাগলকে বেছে নিচ্ছেন অনেকে।
এদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন তাদের বাসিন্দাদের কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে প্যান্ডেলসহ আরও নানা সুবিধার বন্দোবস্ত আছে। আমরা এই সুবিধাটি গ্রহণ করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চমৎকার একটি সুফল মিলবে। পরিবেশ-দূষণ হবে কম। গত কয়েক বছর ধরে এই ব্যবস্থা হয়ে এলেও নাগরিকদের কাছ থেকে তেমন একটা সাড়া না মেললেও ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষ খাপ খাইয়ে নেবে।
আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ