নতুন নামে জামায়াত

গত এক দশক ধরে নানা কারণেই প্রচন্ড রাজনৈতিক চাপে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী । বিগত কয়েক বছরে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এই দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন। তাদের কারো কারো ফাঁসিতে ঝুলে জীবনাবশান হয়েছে।কেউ কেউ আজীবন দণ্ড নিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে ।
এই বাস্তবতার মধ্যেই বছর দুয়েক আগে অনেকটা চুপিসারে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি করে জামায়াত।নতুন কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ।
শত অভিযোগ ও খড়গের প্রতিকূলতা পেরিয়ে রাজনৈতি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত।একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রশ্ন উঠে প্রতীক বিহীন জামায়াত কিভাবে নির্বাচন করবে।
বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে সওয়ার হয়ে ভোটে অংশ নেয় দলটি।বিএনপির প্রতীকে জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট হয়। রিটে জামায়াতের পক্ষে রায় আসে।
নির্বাচনে ব্যাপক ‘ভরাডুবি’ হয় বিএনপি-জামায়াত জোটের।এরপরই প্রশ্ন উঠে বিএনপি জোটে জামায়াতের থাকা নিয়ে।বিশেষ করে বিএনপির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এই বিতর্কের সূচনা করেন।সেই থেকে বিতর্ক শুরু।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাও জামায়াতকে ‘বোঝা’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন। সেই সূত্র ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীরাও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে।অনেকে তো জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধেরও দাবি তোলেন।এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া চলছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও অস্তিত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম বর্তমান নাম পরিবর্তনের চিন্তা করছে। এই প্রস্তাবটি করেছে দলটির শূরা সদস্যরা। তবে নাম কি হবে বা কবে নাগাদ নতুন নাম আসবে- তা কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, জামায়াত ইসলামীর তরুণ নেতাদের বেশিরভাগই চায় নতুন নামে আসুক জামায়াত। অতীত ভুলের জন্য প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের চেতনায় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকুক।তাদের যুক্তি হচ্ছে-নাম বদলালে জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত নয়, বরং লাভবানই হবে।যুদ্ধাপরাধের তীর আর তাদের বিদ্ধ করতে পারবে না।সব গ্লানি থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন দেশে নতুনভাবে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ হবে।বিএনপিসহ অন্যসব বিরোধী দলগুলোর যেখানে রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলিন হওয়ার পথে সেখানে নতুন নামে জামায়াত বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে।শত প্রতিকূলতার মাঝেও দলটির সেই সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দক্ষতা এখনও অটুট রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার বৈঠক হয়। পরিস্থিতির কারণে একসঙ্গে এ বৈঠক করতে না পারায়, সারা দেশের ১৩টি অঞ্চলে আলাদাভাবে একইদিনে শূরার সদস্যরা বৈঠক করেন। এরপর লিখিত আকারে তাদের মত কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ বৈঠকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে মত দেন শূরার সদস্যরা। একই বৈঠকে জামায়াতের বর্তমান নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাবও করেন শূরা সদস্যরা।
আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ