চিত্রনায়ক আলীরাজের জন্মদিন

ভাইয়া তোমার বর,আমি যে দেবর
ভেবে দেখো ভাবী,কার বেশি দাবী
কারে তুমি করবে আপন
করবে কারে পর…
রাজু আনোয়ার: ‘সৎ ভাই’ চলচ্চিত্রের এ গানটি চলচ্চিত্র দর্শকদের মুখে মুখে শোনা যেত সেই আশির দশকে ।গানের কথাগুলো মানুষের মনকে আবেগে আপ্লুত করে আজও । ছবিতে গানটিতে ঠোঁট মিলিয়েছেন নায়ক আলীরাজ । ‘সৎ ভাই’ সিনেমার মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে এই জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতার ।
অভিনেতা আলীরাজ চলচ্চিত্রে আসেন নায়করাজ রাজ্জাকের হাত ধরে ।ছেলেবেলায় সিরাজগঞ্জে থাকতেই বর্ণালী ক্লাবের নাটকে অভিনয় করেন তিনি । এরপর কাজ করেছেন তরুণ সম্প্রদায়, দুর্বার, সংলাপ থিয়েটারে । ঢাকায় চলে আসার পর ঢাকা থিয়েটারে কাজ শুরু করেন । সেখানে তার সহ অভিনেতা ছিলেন হুমায়ূন ফরিদী, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মোস্তফা, রাইসুল ইসলাম আসাদের মত বড় অভিনেতারা । মঞ্চের অনেক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি ।
বিটিভিতে সেলিম আল দীনের লেখা ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ নাটকের মধ্য দিয়ে প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন তিনি । আলীরাজের ভাল নাম আনোয়ার হোসেন। বিটিভিতে অভিনয়ের জন্য আবেদন করার সময় বন্ধু আনোয়ার হোসেন বুলু তার নাম লিখে দেন ডাব্লু আনোয়ার। সেই নাটকের মাধ্যমে চোখে পড়লেন রাজ্জাকের । রাজ্জাক তখন বৈকুন্ঠের উইল অবলম্বনে ‘সৎভাই’ নিমানের চিন্তা করছিলেন । আলীরাজ সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে চলচ্চিত্রে নাম লেখালেন ।
ডব্লিউ আনোয়ার থেকে নায়করাজের দেওয়া নাম ‘আলীরাজ’ হিসেবেই পরিচিতি পান তিনি । এরপর আলীরাজ মমতাজ আলীর ‘নিয়ত’, আজহারুল ইসলাম খানের‘সহযাত্রী’সহ ১১০টি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন । চরিত্রাভিনেত্রা হিসেবেও তিনি অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
আলীরাজ বলেন, ‘আশির দশকের শুরুতে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় । আমি তখন ঢাকা থিয়েটারের কর্মী। টিভিতেও কাজ করতে শুরু করেছি । একদিন কথায় কথায় বললেন চলচ্চিত্রে কাজ করতে । বললাম সেই সুযোগ আমাকে কে দেবে? বললেন, আমি দেব। আমার হাত ধরে অনেক মেয়েই নায়িকা হয়েছে । তবে একজন নায়ক আমি বানাতে চাই । তারপর একদিন ডেকে বললেন, তিনি সিনেমা পরিচালনা করছেন । আমিও সেখানে তার ছোট ভাইয়ের চরিত্রে কাজ করব ।
ছবির নাম ‘সৎভাই’। ১৯৮৩ সালে ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছিল। এটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। কী দারুণ ব্যবসাসফল ছিল সেই ছবি ।লোকে আমার নামের শেষে ‘রাজ’ দেখে ভেবেছিল আমি বুঝি সত্যি নায়করাজের ভাই । অনেকে আমাকে সেই প্রশ্ন করেছে । আমিও নীরব থেকে হেসে মজা নিয়েছি ।
আলীরাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা আইএ । পারিবারিক জীবনে আলীরাজ এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক ।তার স্ত্রী ঝিনুক একজন নৃত্যশিল্পী । ‘নৃত্যাঞ্চল’ নামে প্রতিষ্ঠানে শিবলী ও নিপার সঙ্গে ছেলেদের নাচ শেখান তিনি ।তার দুই সন্তান সরল ও শর্মী।
আলী রাজ জানান , প্রয়াত চাষী ভাইয়ের নির্দেশনায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা চলচ্চিত্রে অভিনয় আমার জীবনের অনেক বড় অর্জন । তবে চাষী ভাইয়ের ‘কাঠগড়া’চলচ্চিত্রটি যদি নব্বইয়ের দশকে শেষ হয়ে মুক্তি পেত সেটাও আমার জন্য উল্লেখ করার মতো একটি চলচ্চিত্র হতে পারতো । তারপরও আমি আমার অবস্থান এবং অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট ।দর্শকের ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই।’
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে সহ নায়ক হিসেবে অধিক পরিচিত আলীরাজ ২০১৬ সালে ‘পুড়ে যায় মন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
আলীরাজ অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, সত্যিকারের মানুষ,ধূমকেতু, পুড়ে যায় মন , ছুঁয়ে দিলে মন , জান্নাত , রাজনীতি, তুখোড় , তুই আমার , আড়াল , দুই পৃথিবী , লাভার নাম্বার ওয়ান ,পাগলা দিওয়ানা , পুত্র এখন পয়সাওয়ালা , রোমিও বনাম জুলিয়েট , নগর মাস্তান , চিনি বিবি , এপার ওপার , চুপি চুপি প্রেম , কঠিন প্রতিশোধ , সেরা নায়ক , আই ডোন্ট কেয়ার , অগ্নি , দবির সাহেবের সংসার , অনেক সাধের ময়না , পোড়ামন , জোর করে ভালোবাসা হয় না , নিষ্পাপ মুন্না , ভালোবাসা আজকাল , ভালোবাসার রঙ , স্বামী ভাগ্য , মাই নেম ইজ সুলতান , দারোয়ানের ছেলে , মাটির ঠিকানা , হায় প্রেম হায় ভালোবাসা , গোলাপী এখন বিলেতে , প্রেমে পড়েছি , টাকার চেয়ে প্রেম বড় , ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না , প্রেমিক পুরুষ , আমার স্বপ্ন আমার সংসার , বিয়ে বাড়ী , বলো না কবুল , কে আমি ,সবার উপরে তুমি , চিরদিন আমি তোমার , মন যেখানে হৃদয় সেখানে , আদরের ছোট ভাই , জন্ম তোমার জন্য , মা বড় না বউ বড় , বাবা আমার বাবা , বড় ভাই জিন্দাবাদ, এ চোখে শুধু তুমি , স্বামী নিয়ে যুদ্ধ , তুমি আমার প্রেম , সন্তান আমার অহংকার , আমাদের ছোট সাহেব , মা আমার স্বর্গ , ময়দান , স্বামীর সংসার , পিতার আসন , দাদীমা , চাচ্চু , ওদের ধর , এই ঘর এই সংসার , ডন , লীলা মন্থন,ডনগিরি প্রভৃতি ।
বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা হতাশাব্যাঞ্জক মন্তব্য করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক আলীরাজ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন আগের মতো গুণীশিল্পীরা কাজ করছে না । এ ছাড়া গুণী নির্মাতাদেরও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না । তবে আমার বিশ্বাস এই অচল অবস্থা থেকে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের চলচ্চিত্রে অনেক মেধাবী পরিচালক-অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন। সবাই এগিয়ে আসলে হয়তো চলচ্চিত্র আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’
আলীরাজ এখনও স্টাইলিশ ড্রেস-আপ পড়েন । তরুণদের সঙ্গে মেশেন, তাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেন । সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করেন ।তিনি বলেন,‘তারুণ্যে জয় গান গেয়ে যেতে চাই আগামীতেও । যারা আমার সঙ্গে মিশছে তারা জানেন অমি কতটা প্রাণবন্ত।’
আলীরাজ বলেন, ‘আমার জন্মদিন খুব বেশি আয়োজন করে পালন করি না । তবে এইদিন কোনো শুটিং রাখি না ।বাসায় থাকি । সবার সঙ্গে মজা করি।
আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ