কাজটাই আমার সব !

চার বছরের পড়াশোনা সারা আলী খান শেষ করেছেন মাত্র তিন বছরে। প্রত্যেক সেমিস্টারে অতিরিক্ত এক বা একাধিক কোর্স নিয়েছেন। তাঁর নাকি বলিউডে আসার জন্য তর সইছিল না। তাই যত দ্রুত সম্ভব পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দেশে ফিরেছেন। বলিউডেই এসেছেন। তবে পড়াশোনাও প্রচণ্ড ভালোবাসতেন তিনি। তাই সেখানে রেকর্ড নম্বর পেয়ে বাবা সাইফ আলী খান আর মা অমৃতা সিংকে গর্বিত করেছেন।
প্রথম ছবি ‘কেদারনাথ’ দিয়ে তিনি জয় করেছেন সেরা নবাগত অভিনেত্রী হিসেবে ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার। ছোটবেলায় কয়েকবার তিনি বাবা, মা আর জয়া বচ্চনের হাত ধরে ফিল্মফেয়ার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। কিন্তু কখনো ভাবেননি, একদিন ওই কালো নারীর অবয়বকে হাতে পাওয়ার গর্বিত মুহূর্ত আসবে তাঁর। অভিনেত্রী হিসেবে বড় পর্দায় আবির্ভাবের আগেই তিনি নিজের কথা আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে জয় করেছেন মানুষের হৃদয়। দ্বিতীয় ছবি ‘সিম্বা’ও আশাতীত সাফল্য পেয়েছে।
২০০৯ সালে সাইফ আলী খান ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘লাভ আজকাল’-এর সিক্যুয়েল তৈরি হচ্ছে। আর পরিচালক ইমতিয়াজ আলীর এবারের ছবিতে জুটি বাঁধতে দেখা যাবে সারা আলী খান আর তাঁর ‘ক্রাশ’ কার্তিক আরিয়ানকে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তারকার সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠা আর বলিউডে পথ চলা নিয়ে কথা বলেছেন।
সারা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে যখন মুম্বাই থেকে উড়োজাহাজে চড়েছি, তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। আর আমি একটা আস্ত বেলুন। সেই যাত্রায় আমার পাশে বসা মানুষটা যদি আমাকে বলত, চার বছর পর রোহিত শেঠির “আঁখ মারে” গানে নাচব, তাহলে আমি হি হি করে হাসতাম। হ্যাঁ, এটা সত্যি, আমি সেই স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমি কি আসলেই ভেবেছিলাম, এই স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে?’
সারা আরও বলেন, ‘আমি তখন সারা দিন বসে বসে খেতাম, পড়তাম আর সিনেমা দেখতাম। জিমের নাম মনে হলেও মুড নষ্ট হয়ে যেত। আর এখন আমি ব্যায়াম করতে ভালোবাসি। দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শরীরচর্চা না করলে দিনটা ভালো যায় না। আমার যে কী অদ্ভুত অনুভূতি হয়, যখন আমি জিমে ঘাম ঝরাই আর শুনি যে জিমনেশিয়ামে “আঁখ মারে” আর “মেরে ওয়ালা ডান্স” গানগুলো বাজছে। আমি নিয়মিত নাচ করি। “কেদারনাথ” আর “সিম্বা” সিনেমা দুটির শুটিং আমি একসঙ্গে করেছি। এর ফাঁকে ওডিশি নাচের অনুশীলন চালিয়েছি।’
সারার প্রতিটি ছবি একেবারে ভিন্ন ধরনের। ২৩ বছর বয়সী এই তারকা বলেন, ‘আমি পরিচালককে বিশ্বাস করাতে চাই যে আমাকে দিয়ে সব হবে। মানুষ শুধু একটা শুক্রবারের কথা বলে। কিন্তু অসংখ্য শনিবার, রোববার আর সোমবার কেটে যায় সিনেমাটা বানাতে। আমাকে ঘর থেকে, পরিবার থেকে অনেক দূরে একটা অজানা অচেনা জায়গায় থাকতে হয়। শুধু কাজের জন্য। কাজটাই আমার সব। আমি সততা আর বিশ্বাস দিয়ে কাজ করি।’
সারা আলী খান তাঁর ছোটবেলার দিনগুলোর কথাও শেয়ার করেন। সারা লিখেছেন, ‘সেটে দেখতাম, মা মেকআপ করছেন। বাবা মেকআপ করছেন। আর আমার জায়গা ছিল ভ্যানিটি ভ্যান।’ এরপর তাঁর বাবা আর মা আলাদা হয়ে যান। আর সন্তানদের স্বাভাবিক জীবন দিতে মা অমৃতা সিং অভিনয় ছেড়ে দেন। অমৃতা সিং আর সাইফ আলী খানের সম্পর্ক যতই তিক্ত হোক না কেন, সাইফ একাধিকবার স্বীকার করেছেন, অমৃতা সিং যেভাবে তাঁর সন্তানদের মানুষ করেছে, তাতে তিনি গর্বিত।
অমৃতা সিং মেয়ে সারা আলী খানকে বলেছেন বলিউডের জন্য যথাযথভাবে তৈরি হতে। যাতে কেউ তাঁর সাফল্য বাবা, মা বা অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করতে না পারে। যাতে কেউ তাঁর দিকে আঙুল তুলতে না পারে। সারা আলী খান নিজেও সেই কথা রেখেছেন। বাবা-মায়ের আলাদা হওয়া নিয়ে তিনি অসংখ্যবার বলেছেন, এ জন্য তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ একটা অসুখী ঘরের চেয়ে দুটো সুখী ঘর ভালো।
তারকাকন্যা সারা জানেন, কিছু রটাতে হবে, কিছু ঘটাতে হবে আর সেই সঙ্গে সমানতালে কাজ করে যেতে হবে। তিনি জানেন, আলোচনায় থাকতে, চর্চিত হওয়ার জন্য পাপারাজ্জিদের মাঝে মাঝে সুযোগ করে দিতে হয়। এই সবকিছু সুন্দরভাবে যিনি ব্যালান্স করতে পারবেন, তিনিই টিকে থাকবেন বলিউডের শত মুখের আসা–যাওয়ার মাঝে
যা হোক, হাতের কাজ শেষ করেই সারা নতুন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এরপর তাঁকে দেখা যাবে গোবিন্দ ও কারিশমা কাপুর অভিনীত ১৯৯১ সালের জনপ্রিয় ছবি ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’-এর রিমেকে। এখানে কারিশমা কাপুরের জায়গায় দেখা যাবে সারা আলী খানকে আর গোবিন্দর চরিত্রে অভিনয় করবেন বরুণ ধাওয়ান। ২০২০ সালের মে মাসে ছবিটি মুক্তি পাবে।
আলোআভানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরএ